ব্যক্তির সততা-শুদ্ধি এবং সমাজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা- দ্বীনের তাকাযা। ইসলামের নেযাম ও পরিচর্যানীতির দাবি হচ্ছে, মানুষ নেককার হবে এবং সমাজ নেকির সঙ্গে নিরাপদ ও শান্তিময় থাকবে। বিপথগামিতা ও অনিরাপত্তামূলক পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়; এমনকি সহনীয়ও নয়। কিন্তু দ্বীনের অনুশীলন থেকে বিচ্যুতি ও দূরত্ব অনেক সময় মুসলমানদের যে কোনো সমাজকে ব্যাপক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর অবধারিত একটি ফল এটাও হয় যে, সমাজে পারস্পরিক শান্তিময়তা ও নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো বিদ্বেষ, বিরোধ ও অসহিষ্ণুতা সমাজে চেপে বসে ব্যাপকভাবে।
এ-জাতীয় অসহিষ্ণুতার পরিস্থিতিতে দায়ী এবং শিকারের ভিন্নতা তো থাকেই, কিন্তু জটিলতা ও বিরোধের ব্যাপকতায় সংকটের মাত্রাটি বড় হয়ে ওঠে। জেদ, প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও ক্ষমতার নানামাত্রিক প্রয়োগ গোটা সমাজকেই আচ্ছন্ন করে ফেলে। কখনো গোষ্ঠী ও স্বার্থকেন্দ্রিক সংঘাত, কখনো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিরোধে ও সংকটে জুলুম ও অমানবিকতার মেঘ প্রলম্বিত হতে থাকে। পাশাপাশি তৈরি হয় কিংবা তৈরি করা হয় দ্বীনী কদর ও মূল্যবোধেরও অবনমন। দ্বীনের সাধারণ অনুশীলন থেকে, ইবাদত-আমল থেকে মানুষের দূরত্ব বাড়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। যেকোনো মুসলিম-প্রধান সমাজের জন্য এমন অসহিষ্ণু ও বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি মারাত্মক ক্ষতিকর। জুলুম, অমানবিকতা, বিরোধ এবং দ্বীন থেকে বিচ্যুতির কারণে সৃষ্ট সামাজিক ফাটল ও ছিদ্র ধরে ঘটে ভিন্ন সমাজ ও কর্তৃত্বের অনুপ্রবেশ। অথচ এসবের কোনোটাই অকল্যাণ ও বিপর্যয় থেকে মুক্ত নয়।
এজন্যই সমাজে বিরোধ ও অসহিষ্ণুতার উদ্ভব হলে জুলুমের মাত্রা যেন ব্যাপক হয়ে উঠতে না পারে- সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং ইনসাফের চর্চা জারি রাখা সব পর্যায়ের মানুষের কর্তব্য। বিরোধ-হানাহানির সময় ক্ষমতা, জেদ ও ক্ষোভ একশ্রেণির মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে। নিজের সুবিধা ও অপরপক্ষের প্রতিকূলতা সৃষ্টির জন্য তারা বাছবিচারহীনভাবে বিরোধ, বাড়াবাড়ি ও দূরত্বের বাজার গরম করে তোলে। এতে এক জায়গা থেকে বিরোধের নির্বিশেষ স্ফুলিঙ্গ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সমাজের ছোট ছোট অংশেও ক্ষত তৈরি হয়, জুলুমের চিহ্ন নেমে আসে। মুসলিম হিসেবে এমন জুলুম ও বেদনা উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। মজলুমের ক্ষতি নগদ ও দৃশ্যমান, জালিমের ক্ষতি ভয়ংকর ও অবধারিত। এমন পরিস্থিতিতে ইনসাফ বজায় রাখা তাই সবার জন্য নিরাপদ। সামাজিক ও ধর্মীয় উভয় বিবেচনাতেই ইনসাফ একটি সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার অন্যতম প্রধান অবলম্বন।