intricate-explorer-FKdlYFanWeI-unsplash

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ। শহরের উঁচু ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপ। লাশ দাফনের মতো ফাঁকা জায়গা, লাশ ঢাকার মতো পর্যাপ্ত কাফনের কাপড় আর জানাযা-দাফনের মতো নির্বিঘ্ন সময় নেই গাজায়। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নারী-শিশু ও বেসামরিক ফিলিস্তিনী মুসলিম ক্ষতবিক্ষত মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। এসবের নিয়ন্ত্রণ দখলদার ইসরাইলের হাতে। পৃথিবীর ‘বড় মুরুব্বি’ আমেরিকা নৌবহর, বোমারু বিমান ও সৈন্য-সামন্ত নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। হাসিমুখে বাইডেন ইসরাইলী নেতাদের বলেছেন, ‘আমিও একজন জায়নবাদী’। অর্থাৎ নির্বিচার হত্যা, জুলুম, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্নসঙ্গী। তিনি এই কথা বলেছেন হাসপাতাল-বিস্ফোরণ ও ৮ শতাধিক হাসপাতাল-নিবাসী বোমাদগ্ধ ফিলিস্তিনী নিহত হওয়ার পর। এরপর গত ২৪/২৫ অক্টোবরের খবর সামনে এল। এক দিনে গাজায় সবচেয়ে বেশি বোমা হামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আশ্রয়ের জায়গায়, পানি সরবরাহের জায়গায় এবং শরণার্থী শিবিরে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

হত্যা ও ধ্বংসের আগে ও পরে এরা মিথ্যাচার করেছে এবং করছে। মিথ্যা তো সবসময়ই খারাপ। মিথ্যা তো সবসময়ই পরিত্যাজ্য ও ধ্বংসাত্মক। কিন্তু জায়নবাদী শক্তি ও তার বড় পৃষ্ঠপোষকের মিথ্যা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম মিথ্যা। একতরফা ‘যুদ্ধ’ এবং নিরীহ মানুষ হত্যার নির্বিচার অভিযানেও এরা মিথ্যাকে ব্যবহার করে মারণাস্ত্রের মতো। বৈধতার ক্ষেত্র তৈরির অজুহাতের উপলক্ষের মতো। আর এদের সঙ্গে পৃথিবীর ‘বোকা’ মানুষদের যারা তথ্য ও বোধের সেবা দিয়ে থাকে- সেই নামজাদা গণমাধ্যমগুলো এসব মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার মতো করে প্রচার করে। মিথ্যার দাবি ও আওয়াজকে বড় করে মানুষের জীবন ও জনপদের অস্তিত্বকে ক্ষুধার্ত হায়েনার গ্রাসে উঠিয়ে দেয়।

এই ইহুদী-খ্রিস্টীয় মোড়ল শক্তির মিথ্যাচারের ইতিহাস ও নজির অগণিত; সম্ভবত তাদের ইতিহাসের ওতপ্রোত অপরিহার্যতা এসব মিথ্যাচার। বদ খাসলত ও বদ কিসমতির কারণে হয়তো ভবিষ্যতেও এই অভিশাপ থেকে তারা সহজে মুক্ত হতে পারবে না।

এ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইরাকে হামলা এবং ইরাক ধ্বংসের আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র রয়েছে। একারণে দুনিয়ার নিরাপত্তার জন্য সে দেশের ওপর হামলা করতে হবে এবং প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে বিচারের মাধ্যমে হত্যা করতে হবে। তাদের দাবি ও যুক্তি প্রচার হতে থাকে গণমাধ্যমে। পৃথিবীবাসী ধরে নেয়, একটি ‘ন্যায্য’ হামলাই হচ্ছে। ক্ষেত্র তৈরি হয়, হামলা হয়, লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, সাদ্দামের ফাঁসি হয়, দেশ ধ্বংস হয়। পরে বুশ-ব্লেয়ারের পক্ষ থেকেই জানানো হয়, ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র পাওয়া যায়নি ইরাকে। সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাদের মিথ্যাচার মিথ্যা হিসেবে সামনে আসে। গণমাধ্যমগুলো সেই মিথ্যার স্বীকারোক্তির কথা দুই বাক্যে উচ্চারণ করে। কোনো পর্যালোচনা-জবাবদিহি তাদের পরিবেশনায় উঠে আসে না। রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে এসে তারা একসঙ্গে মিথ্যার ডিঙি ডাঙায় তুলে নিয়ে যায়।

Facebook
Twitter
LinkedIn

আরও পড়ুন

জুলুমের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অভিশাপ

জুলুম ও অপরাধের সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়টি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ-দুভাবেই হতে পারে। একজন সরাসরি জুলুম-নির্যাতন করলে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জুলুমকারী। অপর একজন তার জুলুম-নির্যাতন ও অপরাধে সহযোগিতা করলে, তাকে নৈতিক ও বাস্তব সমর্থন জোগালে তিনি পরোক্ষ জুলুমকারী। প্রথমজনের কৃত জুলুমের দায় থেকে দ্বিতীয়জন মুক্ত থাকতে পারে না। কিন্তু সমাজে পরোক্ষ জুলুম-সংযুক্ত মানুষেরা

পড়ুন...

অসহিষ্ণুতা : প্রয়োজন ইনসাফ, মানবিকতা ও দ্বীন

ব্যক্তির সততা-শুদ্ধি এবং সমাজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা- দ্বীনের তাকাযা। ইসলামের নেযাম ও পরিচর্যানীতির দাবি হচ্ছে, মানুষ নেককার হবে এবং সমাজ নেকির সঙ্গে নিরাপদ ও শান্তিময় থাকবে। বিপথগামিতা ও অনিরাপত্তামূলক পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়; এমনকি সহনীয়ও নয়। কিন্তু দ্বীনের অনুশীলন থেকে বিচ্যুতি ও দূরত্ব অনেক সময় মুসলমানদের যে কোনো সমাজকে ব্যাপক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে

পড়ুন...

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ। শহরের উঁচু ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপ। লাশ দাফনের মতো ফাঁকা জায়গা, লাশ ঢাকার মতো পর্যাপ্ত কাফনের কাপড় আর জানাযা-দাফনের মতো নির্বিঘ্ন সময় নেই গাজায়। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নারী-শিশু ও বেসামরিক ফিলিস্তিনী মুসলিম ক্ষতবিক্ষত মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে।

পড়ুন...