alim-nKSbudhchGg-unsplash

মুহাররম ও আশুরা : গুরুত্ব ও ফযীলত

মাহে যিলহজ্ব গত হয়ে শুরু হতে যাচ্ছে মুহাররম মাস। হতে যাচ্ছে একটি বছরের বিদায় আর একটি বছরের সূচনা। পশ্চিমাকাশে হেসে উঠবে মুহাররমের হেলাল- নতুন বছরের নতুন চাঁদ। জগদ্বাসীকে ডেকে বলবে- বিগত দিনের হিসাব মেলাও। প্রত্যয় গ্রহণ কর নতুন বছরের। পাথেয় সংগ্রহ কর পরকালের।

দিন যায় রাত আসে। সপ্তাহ পেরিয়ে মাস আসে। ধীরে ধীরে তা-ও ফুরিয়ে যায়। এভাবে বারটি মাস ঘুরতেই কেটে যায় একটি বছর। শুরু হয়ে যায় আবার নতুন বছরের আয়োজন। এভাবে একদিন নিভে আসে জীবন-বাতি। বুদ্ধিমান তো সে-ই যে জীবনের এ মূল্যবান সময়গুলো যথাযথ কাজে লাগায়।

প্রাত্যহিক জীবনে দিন-রাতের এ পরিক্রমা অনেকের কাছেই অনেকটা স্বাভাবিক। তবে জ্ঞানীদের জন্য এ থেকে শিক্ষা গ্রহণের বহু উপলক্ষ রয়েছে। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বিষয়টি বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ وَاخْتِلافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآياتٍ لأولِي الأَلْبَابِ .

নিশ্চয়ই আকাশম-ল ও পৃথিবীর সৃজনে এবং পালাক্রমে রাত-দিনের আগমনে বহু নিদর্শন আছে ওই সকল বুদ্ধিমানদের জন্য…। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯০

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

إِنَّ فِي اخْتِلافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللهُ فِي السَّمَاوَاتِ والأرض لآياتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ .

নিশ্চয়ই দিন-রাতের একের পর এক আগমনে এবং আল্লাহ আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে সেই সকল লোকের জন্য বহু নিদর্শন উপস্থিত রয়েছে, যাদের অন্তরে আছে অল্লাহর ভয়। -সূরা ইউনুস (১০) : ৬

আল্লাহ তাআলা আরো চমৎকার উপস্থাপনে বলেন-

تَبٰرَكَ الَّذِیْ جَعَلَ فِی السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّ جَعَلَ فِیْهَا سِرٰجًا وَّ قَمَرًا مُّنِیْرًا .وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ اَرَادَ اَنْ یَّذَّكَّرَ اَوْ اَرَادَ شُكُوْرًا.

কত মহান সেই সত্তা, যিনি আসমানে ‘বুরূজ’ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে স্থাপন করেছেন উজ্জ্বল প্রদীপ এবং আলো বিস্তারকারী চাঁদ। এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন; (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৬১, ৬২

তবে বাস্তব কথা হল, কেউ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, কেউ করে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

كُلّ النّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا.

প্রতিটি মানুষ সকাল যাপন করে; অতঃপর নিজেকে বিক্রি করে। এভাবে কেউ নিজেকে (আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত করে জীবনকে ধ্বংস থেকে) রক্ষা করে। আর কেউ (নফস ও শয়তানের আনুগত্যে নিয়োজিত হয়ে) নিজেকে ধ্বংস করে ফেলে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৩

বুদ্ধিমান তো সেই, যে প্রতিটি নতুন সময় ও সূচনায় নিজেকে এমন কাজে নিয়োজিত করে, যার মাধ্যমে তার আখেরাত সুন্দর হয়। আর নির্বোধ ওই ব্যক্তি, যে নতুন সময় ও সূচনায় এমন কাজকর্মে লিপ্ত থাকে, যা তার ধ্বংস টেনে আনে। তাই জীবনের প্রতিটি নতুন মুহূর্তে কল্যাণের দিকে আরো ধাবিত হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করাই মুমিনের ঈমানের দাবি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক নসীব করুন।

Facebook
Twitter
LinkedIn

আরও পড়ুন

জুলুমের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অভিশাপ

জুলুম ও অপরাধের সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়টি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ-দুভাবেই হতে পারে। একজন সরাসরি জুলুম-নির্যাতন করলে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জুলুমকারী। অপর একজন তার জুলুম-নির্যাতন ও অপরাধে সহযোগিতা করলে, তাকে নৈতিক ও বাস্তব সমর্থন জোগালে তিনি পরোক্ষ জুলুমকারী। প্রথমজনের কৃত জুলুমের দায় থেকে দ্বিতীয়জন মুক্ত থাকতে পারে না। কিন্তু সমাজে পরোক্ষ জুলুম-সংযুক্ত মানুষেরা

পড়ুন...

অসহিষ্ণুতা : প্রয়োজন ইনসাফ, মানবিকতা ও দ্বীন

ব্যক্তির সততা-শুদ্ধি এবং সমাজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা- দ্বীনের তাকাযা। ইসলামের নেযাম ও পরিচর্যানীতির দাবি হচ্ছে, মানুষ নেককার হবে এবং সমাজ নেকির সঙ্গে নিরাপদ ও শান্তিময় থাকবে। বিপথগামিতা ও অনিরাপত্তামূলক পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়; এমনকি সহনীয়ও নয়। কিন্তু দ্বীনের অনুশীলন থেকে বিচ্যুতি ও দূরত্ব অনেক সময় মুসলমানদের যে কোনো সমাজকে ব্যাপক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে

পড়ুন...

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ। শহরের উঁচু ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপ। লাশ দাফনের মতো ফাঁকা জায়গা, লাশ ঢাকার মতো পর্যাপ্ত কাফনের কাপড় আর জানাযা-দাফনের মতো নির্বিঘ্ন সময় নেই গাজায়। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নারী-শিশু ও বেসামরিক ফিলিস্তিনী মুসলিম ক্ষতবিক্ষত মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে।

পড়ুন...