দেখতে দেখতে গত হতে চলেছে আরো একটি বছর। এখন হিজরী ১৪৪২ সনের যিলহজ্ব মাস। আগামী মাসের প্রথম তারিখ থেকেই ১৪৪৩ হিজরী। শুরু হয়ে যাবে আরেকটি বছর। পৃথিবীর ইতিহাসে আর ফিরে আসবে না ১৪৪২ হিজরী। আমার জীবনেও আর ফিরে পাব না এ দিনগুলো। একটি বছরের সমাপ্তি আর একটি বছরের সূচনাÑ এর মাঝে রয়েছে আমাদের জন্য চিন্তা ও উপলব্ধির এবং শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের যথেষ্ট উপকরণ। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ
تَبٰرَكَ الَّذِیْ جَعَلَ فِی السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّ جَعَلَ فِیْهَا سِرٰجًا وَّ قَمَرًا مُّنِیْرًا، وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ اَرَادَ اَنْ یَّذَّكَّرَ اَوْ اَرَادَ شُكُوْرًا.
কত মহান সেই সত্তা, যিনি আসমানে ‘বুরূজ’ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে স্থাপন করেছেন উজ্জ্বল প্রদীপ এবং আলো বিস্তারকারী চাঁদ। এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেনÑ (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। Ñসূরা ফুরকান (২৫) : ৬১-৬২
একজন মুমিনের জীবন-দর্শনে রাতদিনের এ পরিক্রমা কখনোই হেলার বিষয় নয়; নয় স্বাভাবিক কোনো ঘটনাও। সময়ের এ আগমন-নির্গমন তার মাঝে আত্মোপলব্ধি জাগ্রত করে। সে বিগত দিনের হিসাব মেলায় এবং সামনের পাথেয় সঞ্চয় করে।
পৃথিবীতে সফল ব্যক্তি তো তাকেই বলা হয়, যে বিগত দিনের হিসাব কষে এবং এর আদলে ভবিষ্যতে পথচলার নীতি নির্ধারণ করে। একজন আদর্শ ব্যবসায়ী তো সে-ই, যে দিনশেষে হিসাব মেলায় এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মনীতি নির্ধারণ করে। তেমনি একজন সচেতন মুমিন সে-ই, যে নিজের বিগত দিনের আমলের হিসাব নেয় এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে। সর্বপরি পরকালের চির সফলতা লাভের জন্য সে আরো গতিশীল হয় ঈমান ও আমলের মেহনতে। গুণীজন চমৎকার দৃষ্টান্তে ব্যক্ত করেছেন বিষয়টিÑ
ہو رہی ہے عمر مثل برف کم/ چپکے چپکے رفتہ رفتہ دم بدم.
ایک دن مرنا ہے آخر موت ہے/ کرلے جو کرنا ہے آخر موت ہے.
জীবনটা তোমার অনবরত, যাচ্ছে গলে বরফের মতো।
আখের তো মরতেই হবে, করবার যা এখনই করো।
কাজেই যিলহজ্ব মাসের চাঁদ আমাদেরকে বিগত বছরগুলোর হিসাব মেলাবার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পৌঁছিয়ে দেয় আমাদের নিকট স্বচ্ছ ঈমান, নেক আমল, শুদ্ধ ফিকির ও উত্তম আখলাকের দীপ্তিতে জীবনকে উদ্ভাসিত করার বার্তা।