mosquegrapher-2D8SKnpcoKs-unsplash

৭ই অক্টোবরের পর পর ইসরাইল

৭ই অক্টোবরের পর পর ইসরাইল ও তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা অনেক রকম হুমকি-হুংকার দিয়েছে, নানারকম মিথ্যাচার করেছে, কিন্তু শিশু শিরশ্ছেদের এই মিথ্যাটি উচ্চারণ করে ‘সন্ত্রাসী’ ট্যাগিংয়ের পুরোনো ফর্মুলা ব্যবহার করে তারা ঢালাও ও নির্বিচার হত্যার পাশবিক অনুশীলন করতে চেয়েছে এবং করেছে। তাদের এই কাজে ঠাণ্ডা মাথায় সহযোগিতা করেছে তাদের সমাজের মিডিয়া। পশ্চিমের ক্ষমতা ও মিডিয়া মিথ্যার বীজ বপন করেছে, সেই বীজকে বৃক্ষ বানিয়েছে, পরে সেই বৃক্ষ দেখিয়ে মানুষ হত্যা করেছে এবং জনপদ ধ্বংস করেছে। ইহুদী-খ্রিস্টান ক্ষমতা ও মিডিয়ার এই হাত ধরাধরি মিথ্যাচার নতুন ঘটনা নয়, আর এবারের গাজা-ইসরাইল ঘটনায় এ ধরনের মতলবি মিথ্যাচার এটাই শেষ ছিল না।

কয়েক দিনের মাথায় ১৭ অক্টোবর রাতে গাজার একটি হাসপাতালে বোমা মেরে ৫০০ মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয়। পরবর্তী কয়েক দিনের হিসাবে নিহতের এই সংখ্যা ৮০০ পার হয়ে যায়। অথচ ১৮ই অক্টোবর, ঘটনার ১৫/১৬ ঘণ্টা পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের তেলআবিবে এসে হাজির হন এবং ইসরাইলী নেতাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণ ইসরাইল ঘটায়নি, অন্য কেউ ঘটিয়েছে। অর্থাৎ ইসরাইলী কোনো কোনো কর্মকর্তা হাসপাতাল হত্যাকাণ্ডের পর পর নিজেদের কর্তৃত্ব দাবি করে টুইট করার পর যখন বুঝেছে এ ঘটনার দায় নেওয়া ঠিক হবে না- তখন তারা বক্তব্য উল্টে দেয় এবং বলতে শুরু করে, এটি গাজার ভেতর থেকেই ফিলিস্তিনী ‘ইসলামী জিহাদ’ গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। বাইডেন সেই উল্টো করে দেওয়া ইসরাইলী বক্তব্যকেই নিজের দাবি হিসেবে সামনে আনেন। তিনি এবার বলেন, এ হাসপাতালে বোমা বিস্ফোরণের কাজ ইসরাইলের নয়, এটি করেছে ফিলিস্তিনীরাই। নিরীহ গাজাবাসীর ওপর পরবর্তী হামলাগুলো নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য এটাও ছিল একটা শক্ত ও মোটা মিথ্যা।

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ। শহরের উঁচু ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপ। লাশ দাফনের মতো ফাঁকা জায়গা, লাশ ঢাকার মতো পর্যাপ্ত কাফনের কাপড় আর জানাযা-দাফনের মতো নির্বিঘ্ন সময় নেই গাজায়। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নারী-শিশু ও বেসামরিক ফিলিস্তিনী মুসলিম ক্ষতবিক্ষত মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। এসবের নিয়ন্ত্রণ দখলদার ইসরাইলের হাতে। পৃথিবীর ‘বড় মুরুব্বি’ আমেরিকা নৌবহর, বোমারু বিমান ও সৈন্য-সামন্ত নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। হাসিমুখে বাইডেন ইসরাইলী নেতাদের বলেছেন, ‘আমিও একজন জায়নবাদী’। অর্থাৎ নির্বিচার হত্যা, জুলুম, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্নসঙ্গী। তিনি এই কথা বলেছেন হাসপাতাল-বিস্ফোরণ ও ৮ শতাধিক হাসপাতাল-নিবাসী বোমাদগ্ধ ফিলিস্তিনী নিহত হওয়ার পর। এরপর গত ২৪/২৫ অক্টোবরের খবর সামনে এল। এক দিনে গাজায় সবচেয়ে বেশি বোমা হামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আশ্রয়ের জায়গায়, পানি সরবরাহের জায়গায় এবং শরণার্থী শিবিরে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn

আরও পড়ুন

জুলুমের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অভিশাপ

জুলুম ও অপরাধের সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়টি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ-দুভাবেই হতে পারে। একজন সরাসরি জুলুম-নির্যাতন করলে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জুলুমকারী। অপর একজন তার জুলুম-নির্যাতন ও অপরাধে সহযোগিতা করলে, তাকে নৈতিক ও বাস্তব সমর্থন জোগালে তিনি পরোক্ষ জুলুমকারী। প্রথমজনের কৃত জুলুমের দায় থেকে দ্বিতীয়জন মুক্ত থাকতে পারে না। কিন্তু সমাজে পরোক্ষ জুলুম-সংযুক্ত মানুষেরা

পড়ুন...

অসহিষ্ণুতা : প্রয়োজন ইনসাফ, মানবিকতা ও দ্বীন

ব্যক্তির সততা-শুদ্ধি এবং সমাজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা- দ্বীনের তাকাযা। ইসলামের নেযাম ও পরিচর্যানীতির দাবি হচ্ছে, মানুষ নেককার হবে এবং সমাজ নেকির সঙ্গে নিরাপদ ও শান্তিময় থাকবে। বিপথগামিতা ও অনিরাপত্তামূলক পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়; এমনকি সহনীয়ও নয়। কিন্তু দ্বীনের অনুশীলন থেকে বিচ্যুতি ও দূরত্ব অনেক সময় মুসলমানদের যে কোনো সমাজকে ব্যাপক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে

পড়ুন...

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ

গাজা এখন রক্ত আর লাশের জনপদ। শহরের উঁচু ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপ। লাশ দাফনের মতো ফাঁকা জায়গা, লাশ ঢাকার মতো পর্যাপ্ত কাফনের কাপড় আর জানাযা-দাফনের মতো নির্বিঘ্ন সময় নেই গাজায়। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নারী-শিশু ও বেসামরিক ফিলিস্তিনী মুসলিম ক্ষতবিক্ষত মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে।

পড়ুন...